যেকোনো ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে চলতি সম্পদ (Current Assets) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলো এমন সম্পদ যা এক বছরের মধ্যে নগদে রূপান্তরযোগ্য, অথবা ব্যবসার দৈনন্দিন কার্যক্রমে ব্যবহার হয়। ব্যবসার স্বল্পমেয়াদী আর্থিক সক্ষমতা এবং তারল্য (Liquidity) পরিমাপের জন্য চলতি সম্পদের সঠিক হিসাব জানা জরুরি।
চলতি সম্পদের সংজ্ঞা
চলতি সম্পদ হলো সেই সব সম্পদ যা ব্যবসা স্বল্প সময়ে নগদে রূপান্তর করতে পারে, বিক্রি করতে পারে অথবা ব্যবহার করতে পারে। সাধারণত এক বছরের মধ্যে এই সম্পদগুলো নগদে রূপান্তরযোগ্য হয়।
ব্যবসায় প্রচলিত চলতি সম্পদের ধরন
1. নগদ অর্থ (Cash & Cash Equivalents)
ব্যাংক বা ক্যাশবক্সে থাকা নগদ টাকা এবং চেক, ড্রাফট, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যালেন্স ইত্যাদি।
📌 উদাহরণ: ক্যাশ ইন হ্যান্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স।
2. প্রাপ্য হিসাব (Accounts Receivable)
গ্রাহকের কাছ থেকে পণ্য বা সেবা বিক্রির পরে যে টাকা পাওনা থাকে।
📌 উদাহরণ: ক্রেডিট বিক্রির বাকি টাকা।
3. মজুদ পণ্য (Inventory)
ব্যবসার বিক্রির জন্য রাখা পণ্য বা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় থাকা কাঁচামাল।
📌 উদাহরণ: রিটেইল শপের স্টক, কারখানার কাঁচামাল।
4. অগ্রিম প্রদেয় টাকা (Prepaid Expenses)
ভবিষ্যতের জন্য আগে থেকে দেওয়া খরচ।
📌 উদাহরণ: অগ্রিম ভাড়া, অগ্রিম বীমা প্রিমিয়াম।
5. স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ (Short-term Investments)
এক বছরের মধ্যে নগদে রূপান্তরযোগ্য বিনিয়োগ।
📌 উদাহরণ: ট্রেজারি বিল, স্বল্পমেয়াদি ফিক্সড ডিপোজিট।
6. অন্যান্য চলতি সম্পদ (Other Current Assets)
যে সব সম্পদ এক বছরের মধ্যে নগদে রূপান্তর করা সম্ভব কিন্তু উপরের ক্যাটাগরিতে পড়ে না।
📌 উদাহরণ: কর্মচারীদের কাছ থেকে অগ্রিম দেওয়া টাকা।
ব্যবসায় চলতি সম্পদ হিসাব রাখা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
চলতি সম্পদের সঠিক হিসাব রাখা ব্যবসার জন্য কয়েকটি কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
- আর্থিক স্থিতি নির্ধারণ – চলতি সম্পদ ও দায় তুলনা করে বোঝা যায় ব্যবসা স্বল্পমেয়াদি দায় পরিশোধে সক্ষম কি না।
- তারল্য (Liquidity) নিয়ন্ত্রণ – নগদ প্রবাহ সঠিক আছে কিনা এবং জরুরি প্রয়োজনে অর্থ জোগাড় করা সম্ভব কিনা তা নিশ্চিত হয়।
- বাজেট পরিকল্পনা সহজ হয় – কোন খাতে কত টাকা রাখা উচিত এবং ভবিষ্যতের ব্যয় পরিকল্পনা করা সহজ হয়।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা – হঠাৎ বিক্রয় কমে গেলে বা ক্রয় বেড়ে গেলে ব্যবসায় অর্থ সংকট এড়াতে সাহায্য করে।
- বিনিয়োগ ও ঋণ গ্রহণে সুবিধা – ব্যাংক বা বিনিয়োগকারীরা ব্যবসার চলতি সম্পদ দেখে সিদ্ধান্ত নেয় ঋণ বা বিনিয়োগ দেওয়া হবে কি না।
চলতি সম্পদের গুরুত্ব
- দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা – পণ্য ক্রয়, কর্মচারী বেতন, ভাড়া পরিশোধ ইত্যাদিতে ব্যবহার হয়।
- আর্থিক স্থিতি বোঝা – বেশি চলতি সম্পদ মানে ব্যবসার তারল্য বেশি।
- ঝুঁকি কমানো – জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত নগদে রূপান্তরের সুযোগ থাকে।
চলতি সম্পদ পরিমাপের সূত্র
ব্যবসায় চলতি সম্পদ মোট হিসাব করা হয় এভাবে:
CopyEditচলতি সম্পদ = নগদ + প্রাপ্য হিসাব + মজুদ + অগ্রিম প্রদেয় টাকা + অন্যান্য চলতি সম্পদ
✅ উপসংহার:
চলতি সম্পদ ব্যবসার আর্থিক স্বাস্থ্য ও স্বল্পমেয়াদি দায় পরিশোধের সক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। সঠিকভাবে এগুলোর হিসাব রাখলে ব্যবসায় অর্থ ব্যবস্থাপনা সহজ হয়, ঝুঁকি কমে, এবং ভবিষ্যতের আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।