ব্যবসার হিসাব রাখার নিয়ম

You are currently viewing ব্যবসার হিসাব রাখার নিয়ম
ব্যবসার হিসাব রাখার নিয়ম

ব্যবসার হিসাব রাখার সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি অনুযায়ী ব্যবসার হিসাব রাখতে হয় আমরা সবাই জানি। ব্যবসার করতে হলে অবশ্যই ব্যবসার হিসাব নিকাশ  সঠিক নিয়মে রাখতে হবে  । আমরা জানি যে,  ব্যবসার হিসাব সঠিক ও নির্ভুল প্রত্যেক ব্যবসার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসার হিসাব নিকাশ সঠিক পদ্ধতিতে না করলে ব্যবসার হিসাব সঠিক ও নির্ভূল থাকে না  । আর ব্যবসার হিসাব নিকাশ সঠিক ও নির্ভূল না থাকলে, ব্যবসার লাভ-ক্ষতি, আয় -ব্যয় সঠিকভাবে নির্নয় করা সম্ভব নয় । সঠিক ও নির্ভূল হিসাব নিকাশ না থাকলে ব্যবসার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারনা জানা যায় না, ফলে ব্যবসায় সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না এবং আপনি বুঝতেও পারবেন না যে, ব্যবসায়ীকভাবে আপনি, কতটা সফল না ব্যর্থ ?

আর ব্যবসার সঠিক ও নির্ভূল হিসাব তখনোই পাওয়া যায়, যখন হিসাব নিকাশ সঠিক নিয়মে বা পদ্ধতিতে করা হয় । 

সঠিকভাবে হিসাব নিকাশ রাখাতে অনেক শ্রম ও সময় দিতে হয়। তবে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির  উন্নয়নের ফলে , একাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে কম সময়ে ব্যবসার সঠিক ও নির্ভুল হিসাব রাখা খুব সহজ।

আমারা সবাই জানি ব্যবসার হিসাবে মুল ৪ টি বিষয় থাকে – 

১. সম্পদ হিসাব

২.  দায়ভার হিসাব

৩. আয় হিসাব ও 

৪.ব্যয় হিসাব

এরপর যা কিছু থাকে তা এগুলোর শাখা-প্রশাখা মাত্র। এগুলো যোগ বিয়োগ করে ব্যবসার লাভ-ক্ষতি বা আয় বিবরনী,  আর্থিক অবস্থা(আর্থিক বিবরনী)  হিসাব নিরুপন করা হয় এবং ব্যবসার উন্নয়নে সঠিক সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়

ব্যবসার হিসাব নিকাশ রাখার সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি

হিসাব বিজ্ঞানে দুই ধরনের হিসাব রাখার পদ্ধতি বা নিয়ম আছে

১। একতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি বা নিয়ম – এক তরফা দাখিলা পদ্ধতি অসম্পূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক হিসাব ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে কোন নির্ধারিত নিয়ম কানুন নেই  । সবার কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা নেই । 

২। দুতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি বা নিয়ম –  দুতরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি হচ্ছে হিসাব রাখার একমাত্র বিজ্ঞানসম্মত হিসাব পদ্ধতি এবং সর্বজনস্বীকৃত বা সাবারকাছে গ্রহণযোগ্য একটি হিসাব পদ্ধতি।  সমগ্র বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহে হিসাব সংরক্ষণের জন্য নির্ভরযোগ্য, বিজ্ঞানসম্মত ও পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি হিসেবে দুতরফা দাখিল পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচিত। ব্যবসার সঠিক ফলাফল ও প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানার জন্য দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে এই পদ্ধতিতে  বা নিয়মে সকল প্রকার ব্যবসার হিসাব রাখা হয়।

এই পদ্ধতির জনক ইতালির প্রসিদ্ধ গণিতবিদ লুকা প্যাসিওলি

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে ব্যবসার হিসাব রাখার নিয়ম –

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে সম্পদ হিসাব হচ্ছে ডেভিড, দায়ভার হিসাব হচ্ছে ক্রেডিট, আয় হিসাব হচ্ছে ক্রেডিট এবং ব্যয় হিসাব হচ্ছে ডেবিট।

সম্পদ হিসাব

সম্পদ এর ভিতরে যে হিসাবগুলো সাধারণত থাকে

  • চলতি সম্পদ
    • কাস্টমার বা গ্রাহকের হিসাব
    • ব্যাংক হিসাব বা ব্যাংকের হিসাব ( বিকাশ, নগদ, জনতা ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক ইত্যাদি)
    • ক্যাশ হিসাব (নগদ ক্যাশ টাকা)
    • স্টক/ পণ্য মজুদ হিসাব (Stock Inventory)
    • সঞ্চয় হিসাব
    • অ্যাডভান্স ও লোন প্রদান হিসাব
  • স্থায়ী সম্পদ হিসাব (বিল্ডিং, ফার্নিচার, কম্পিউটার, জমি-জমা, গাড়ি, যন্ত্রপাতি/মেশিনারিজ ইত্যাদি)
  • বিনিয়োগ হিসাব

দায়ভার হিসাব

  • মূলধন হিসাব
    • রিজার্ভ হিসাব ও আয় হিসাব
    • শেয়ার হোল্ডার হিসাব
  • চলতি দায়ভার হিসাব
    • সাপ্লায়ার হিসাব বা পাওনাদার হিসাব
    • ট্যাক্স হিসাব
  • লোন হিসাব
    • ব্যাংক লোন ( ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার হিসাব)
    • সিকিউর লোন ( ১ বছরের অধিক সময়ের লোন হিসাব)
    • আনসিকিউর লোন ( ১ বছরের কম সময়ের লোন হিসাব)

আয় হিসাব

আয় এর ভিতরে যে হিসাবগুলো সাধারণত থাকে

  • প্রতক্ষ্য আয় (উৎপাদনের সময় যত ধরনের আয়)
  • পরক্ষ্য আয় (বিক্রয়ের সময় যত ধরনের আয়)
  • বিক্রয় হিসাব

ব্যয় হিসাব

ব্যয় এর ভিতরে যে হিসাবগুলো সাধারণত থাকে

  • প্রতক্ষ্য ব্যয় ( যত ধরনের উৎপাদন ব্যয় )
  • পরক্ষ্য ব্যয় ( অফিস পরিচালনা খরচ, কর্মচারী বেতন, অফিস ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, মেরামত ইত্যাদি যত ধরনের ব্যায়)
  • ক্রয় হিসাব

মুলকথা – আমরা জানি ৪ টি মুল বিষয়

  1. সম্পদ হচ্ছে ডেবিট
  2. দায়ভার হচ্ছে ক্রেডিট
  3. আয়  হচ্ছে ক্রেডিট
  4. ব্যয় হচ্ছে ডেবিট

মনে রাখার সহজ উপায় হল – প্রথমে এবং শেষে ডেবিট । মাঝ খানে ক্রেডিট । মাঝ খানে থাকে দায়ভার ও আয় এবং প্রথমে আর শেষে থাকে সম্পদ ও ব্যয়

এই পদ্ধতিতে প্রতিটি হিসাবের (লেনদেনের)  জন্য দুটি হিসাব রাখতে হয়, একটি ডেবিট এবং অন্যটি ক্রেডিট। ডেবিট এবং ক্রেডিট সব সময় সমান হবে। একাধিক ডেবিট হিসাব এবং একাধিক ক্রেডিট হিসাব হতে পারে, তবে সর্বমোট দুটোই সমান হবে।

  • যেহেতু সম্পদ ডেবিট তাই সম্পদ হিসাবে কম করতে হলে,  ক্রেডিট এন্ট্রি করতে হবে এবং বেশি করতে হলে ডেবিট এন্ট্রি করতে হবে । 
  • অর্থাৎ যেটা ডেবিট সেইটা বেশি করতে হলে ডেবিট এবং কম করতে হলে বিপরিত হবে বা  ক্রেডিট হবে
  • দায়ভার যেহেতু ক্রেডিট, সেহেতু  কমাতে গেলে –  ডেবিট এন্ট্রি করতে হবে এবং বেশি করতে হলে বিপরিত হবে বা  ক্রেডিট এন্ট্রি করতে হবে 
  • সেইভাবে আয় হচ্ছে ক্রেডিট – তাহলে আয় পরিমান বাড়তে হলে ক্রেডিট এন্ট্রি করতে হবে এবং ব্যয় হচ্ছে ডেবিট – তাই ব্যয় বেশি করতে হলে ডেবিট এন্ট্রি করতে হবে

কোনটি ডেবিট এবং কোনটি ক্রেডিট হবে এই বিষয়টি এখন আর মনে রাখতে হয় না । ডেবিট ক্রেডিট নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। দুতরফা দাখিলা একাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে খুব সহজেই দুতরফা দাখিলা  পদ্ধতিতে বা নিয়মে আপনার ব্যবসার হিসাব নিকাশ রাখতে পারবেন। সফটওয়্যার সকল কাজ অটোমেটিক করে দিবে । শুধু আপনাকে রিসিপ্ট, পেমেন্ট, ক্রয়, বিক্রয় ও জার্নাল এন্ট্রি করতে হবে । বাকী সকল কাজ সফটওয়্যার করে দিবে

ব্যবহার করুন

অভয় লেনদেন – বিজ্ঞানসম্মত দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির একাউন্টিং সফটওয়্যার। বাংলা ভাষায় এবং বাংলাদেশের একমাত্র দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির একাউন্টিং সফটওয়্যার

 

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব রাখার কিছু উদাহরণ

দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব রাখার কিছু উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা দেওয়া হল

ধরুন – আপনি নগদ ক্যাশে ৫,০০০/- টাকা বিক্রয় করলেন – তাহলে -ক্যাশে টাকা বাড়বে এবং বিক্রয়ের পরিমান বাড়বে 

  • ক্যাশ হিসাব ৫,০০০/- টাকা ডেবিট (Dr)
  • বিক্রয় হিসাব ৫,০০০/- টাকা ক্রেডিট (Cr)

আবার নগদ ক্যাশে ৫.০০০/- টাকার পণ্য ক্রয় করলেন – তাহলে ক্যাশে টাকা কমবে এবং ক্রয় হিসাব বাড়বে

  • ক্যাশ হিসাব ৫,০০০/- টাকা ক্রেডিট (Cr)
  • ক্রয় হিসাব ৫,০০০/- টাকা  ডেবিট (Dr)

আবার ধরুন – কর্মচারীকে ক্যাশে ৫,০০০/- টাকা বেতন প্রদান করলেন – তাহলে ক্যাশে টাকা কমবে এবং ব্যয় বাড়বে

  • ক্যাশ হিসাব ৫,০০০/- টাকা ক্রেডিট (Cr)
  • কর্মচারি বেতন হিসাব ৫,০০০/- টাকা  ডেবিট (Dr)

বাকীতে কাস্টমার বা গ্রাহকের কাছে ৫,০০০/- টাকার পণ্য বিক্রয় করলেন – তাহলে কাস্টমারের হিসাবে টাকা বাড়বে এবং বিক্রয় হিসাবে বাড়বে

  • কাস্টমার বা গ্রাহকের হিসাব ৫,০০০/- টাকা ডেবিট (Dr)
  • বিক্রয় হিসাব ৫,০০০/- টাকা ক্রেডিট (Cr)
 

কাস্টমার বা গ্রাহকের থেকে পাওনা ৫,০০০/- টাকা  নিলেন – তাহলে ক্যাশে টাকা বাড়বে এবং কাস্টমারের হিসাবে কমে যাবে

  • ক্যাশ হিসাব ৫,০০০/- টাকা ডেবিট (Dr)
  • কাস্টমার বা গ্রাহকের হিসাব ৫,০০০/- টাকা  ক্রেডিট (Cr)

বাকীতে সাপ্লায়ার কাছে ৫,০০০/- টাকার পণ্য ক্রয় করলেন – তাহলে সাপ্লায়ারের হিসাবে টাকা বাড়বে বা দায়ভার বাড়বে এবং বিক্রয় হিসাবে টাকার পরিমান বাড়বে বা ব্যয় বাড়বে

  • সাপ্লায়ার হিসাব ৫,০০০/- টাকা ক্রেডিট (Cr)
  • ক্রয় হিসাব ৫,০০০/- টাকা ডেবিট (Dr)

সাপ্লায়ারকে ক্যাশে ৫,০০০/- টাকা প্রদান করলেন – তাহলে ক্যাশে টাকা কমবে এবং সাপ্লায়ারের হিসাবে টাকা কমবে

  • ক্যাশ হিসাব ৫,০০০/- টাকা ক্রেডিট (Cr)
  • সাপ্লায়ার হিসাব ৫,০০০/- টাকা  ডেবিট (Dr)

Leave a Reply